Facebook
Twitter
WhatsApp

অবৈধ নীলক্ষেত মার্কেট ভেঙে ফেলার উদ্যোগ

image_pdfimage_print

নীলক্ষেত রোড সাইটের তিনতলা অবৈধ মার্কেট ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

 

চলতি মাসেই ওই মার্কেটে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার কথা ভাবছে সংস্থার সম্পত্তি বিভাগ। ডিএসসিসির মেয়র দেশের বাইরে রয়েছেন, দেশে ফিরলেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা নীলক্ষেত এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে এ অবৈধ মার্কেট। ওই এলাকার গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজসংলগ্ন সড়কের পাশে চার কাঠা জায়গার ওপর এই অবৈধ মার্কেট গড়ে তোলা হয়েছে।

প্রকাশ্যে মূল্যবান ওই জমির ওপর অবৈধ মার্কেট গড়ে তোলা হলেও ডিএসসিসির সংশ্লিষ্টরা নির্বিকার ছিল। প্রায় এক দশক ধরে ওই মার্কেটটি অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। ডিএসসিসির অবৈধ ওই মার্কেটটি বৈধ করতে দুদফা মার্কেট ভবনের ফিটনেস টেস্ট করেছে।

২০১৪ সালে ‘হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্স ইনস্টিটিউট’র মাধ্যমে প্রথম ফিটনেস টেস্ট করা হয়। ওই টেস্টের রিপোর্ট ইতিবাচক আসে। ডিএসসিসির তৎকালীন প্রশাসন ওই টেস্ট রিপোর্টে খুশি হতে পারেনি। পরে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বুয়েট) দিয়ে মার্কেটের ফিটনেস টেস্ট করায়, সেখানেও রিপোর্ট ইতিবাচক আসে। এতে ডিএসসিসির খরচ হয় প্রায় ২০ লাখ টাকা।

এরপর ওই জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসসিসি। তবে যারা অস্থায়ী বরাদ্দ নিয়ে অবৈধ মার্কেট করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন, তাদের বাদ দিয়ে অন্যদের বরাদ্দ দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। ডিএসসিসি মার্কেটের দখলদারদের হটিয়ে অন্যদের বরাদ্দ দেওয়ার উদ্যোগ নিলে ২০১৮ সালে হাইকোর্টে ‘রিট মামলা’ করেন নীল সিটি করপোরেশন রোড সাইট মার্কেট দোকান মালিক সমিতি (দক্ষিণ)।

ওই মামলায় মার্কেটের দখলদারদের নামে দোকান বরাদ্দ দেওয়ার আদেশ দেন হাইকোর্ট। এরপর ডিএসসিসির বরাদ্দ কমিটি ওই মার্কেটের দোকান বরাদ্দের উদ্যোগ থেকে সরে আসে। এরপর থেকে অবৈধ প্রক্রিয়ায় বহাল তবিয়তে পরিচালিত হচ্ছে নীলক্ষেত মার্কেট। দোকান মালিক ও সমিতির নেতারা সরকারি বরাদ্দের শর্ত মেনে সরকারি রাজস্ব (সালামি) পরিশোধ করার ব্যাপারে আগ্রহী হলেও ডিএসসিসি সে সুযোগ সৃষ্টি করছে না। আবার অবৈধ মার্কেট ভাঙার ব্যাপারেও কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ১৯৬১ সালে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজসংলগ্ন নীলক্ষেত রোড সাইটে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৩৭টি দোকান বরাদ্দ দেয় তৎকালীন নগর সংস্থা। অর্ধশতকের বেশি সময় ধরে ওই জায়গায় অস্থায়ী দোকানগুলো যথাযথ নিয়ম মেনে ব্যবসা পরিচালনা করেছে।

এরপর ২০১২ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা বিধি ভেঙে নিজ খরচে সেখানে আরও ১৪৮টি দোকান বরাদ্দ দেয়। ওই বরাদ্দ বলে দোকান মালিকরা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ জায়গার ৪ কাঠা জায়গাজুড়ে তিন তলা মার্কেট গড়ে তোলেন। দীর্ঘ সময় ধরে মার্কেট নির্মাণ কাজ চললেও সেখানে বাধা দেয়নি ডিএসসিসি। আর এই অবৈধ জায়গায় মার্কেট গড়ে তোলার পেছনে সে সময়ের একজন প্রভাবশালী প্রতিমন্ত্রীর পরোক্ষ সহযোগিতা ছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে ডিএসসিসির সার্ভেয়ার মুহাম্মদ মুরাদ হোসেন, সৈয়দ রুমান ও কানুনগো মোহাম্মদ আলী পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাদের পছন্দের লোককে এই মার্কেটের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় অনির্মিত ছাদের ৭৪টি দোকান মাসিক প্রতি বর্গফুট ১৫ টাকা ভাড়ায় অস্থায়ী বরাদ্দ দেয় এবং নিজ খরচে ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়।

অথচ ডিএসসিসির সম্পত্তি ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত বিধিবিধান বা আইনে সিটি করপোরেশনের জায়গায় অস্থায়ীভাবে মাসিক ভাড়ায় বরাদ্দ গ্রহীতাদের পাকা ভবন নিজ খরচে নির্মাণের অনুমতি প্রদানের বিধান না থাকা সত্ত্বেও বাণিজ্যিক মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ জমি অস্থায়ী বরাদ্দ দেয় তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, এই মার্কেটের দোকান নম্বর ৫০ থেকে ৮৩/১-এর পেছনে পরিত্যক্ত জায়গা বরাদ্দের জন্য দক্ষিণ সিটির তৎকালীন প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন নীলক্ষেত সিটি করপোরেশন মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি একেএম সামছুদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন।

আবেদনপত্রের সঙ্গে আগের বৈধ বরাদ্দপ্রাপ্ত নিচতলার ৩৭ জন দোকান-মালিকের নাম, ঠিকানা ও সইসহ একটি তালিকা ছিল। ওই তালিকার প্রতিটি পৃষ্ঠার নিচে সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সই ছিল। নিচতলায় বরাদ্দপ্রাপ্তরা শুধু তাদের লাগোয়া দক্ষিণ পাশের পরিত্যক্ত অংশ ব্যবহারের জন্য চেয়েছিলেন। বহুতল মার্কেট নির্মাণ বা উপরতলা বরাদ্দের জন্য আবেদন করেননি।

এ প্রসঙ্গে নীল সিটি করপোরেশন রোড সাইট মার্কেট দোকান মালিক সমিতির (দক্ষিণ) সাধারণ সম্পাদক মো. আবু সাহাদাত লাবলু যুগান্তরকে বলেন, নীলক্ষেত রোড সাইট মার্কেটের দক্ষিণাংশের ৩৭টি দোকান ১৯৬১ সাল থেকে চলছে। আর সেখানে ২০১২ সালে নতুন করে ১৪৮টি দোকান নির্মাণ করা হয়েছে।

এসব দোকান বরাদ্দ নেওয়ার পর ডিএসসিসির নিয়ম ভেঙে মার্কেট করা হয়েছে। তবে বিল্ডিং নির্মাণের ক্ষেত্রে টেকসই নির্মাণ কাজ করা হয়েছে। এ কারণে ডিএসসিসি এই মার্কেটের ফিটনেস যাচাই করে বরাদ্দ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। বরাদ্দ গ্রহীতা হিসাবে উচ্চ আদালত থেকে আমাদের দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ায় সেই উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি।

তিনি বলেন, ডিএসসিসি এখন এই মার্কেট ভেঙে ফেলবে বলে একটা আলোচনা তুলেছে। যদিও আমরা যোগাযোগ করে দেখেছি-এটা চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নয়। গুটিকয়েক কর্মকর্তা এটা নিয়ে নানা কথা ছড়াচ্ছেন।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রাসেল সাবরিন বলেন, নীলক্ষেত রোড সাইট মার্কেট নিয়ে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ খুবই কঠোর অবস্থানে রয়েছে। প্রথমতলা বাদে উপরের দোতলা ভেঙে ফেলার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। মেয়র মহোদয় দেশের বাইরে রয়েছেন। উনি দেশে ফিরলে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

খবরটি শেয়ার করুন

Table of Contents

প্রধান উপদেষ্ঠা : আলহাজ্ব ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ এমপি, সংসদ-সদস্য ঢাকা ১৬,প্রকাশক : মোঃ মাসুদ রানা (জিয়া) ।সম্পাদক : শাহাজাদা শামস ইবনে শফিক।সহকারী সম্পাদক : সৌরভ হাসান সোহাগ খাঁন। 

Subscribe Now

নিউজরুম চিফ এডিটর : মোঃ শরিফুল ইসলাম রবিন।সম্পাদকীয় কার্যালয় : ১২০/এ মতিঝিল বা/এ, ৪থ তলা, সুইট-৪০২, ঢাকা- ১০০০বার্তা কক্ষ : ০১৬৪২০৭৮১৬৪ – বিজ্ঞাপনের জন্য : ০১৬৮৬৫৭১৩৩৭

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by www.channelmuskan.tv © 2022

x