সোমবার দুপুর আড়াইটা। রাজধানীর খামারবাড়িতে সাংসারিক মালসামানা নিয়ে একটি পিকআপ দাঁড়িয়ে। কিশোরী দুটি মেয়ে আর বয়স্ক এক নারী পিকআপে। কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো- বাসা বদলাচ্ছেন বুঝি? বললেন- নাহ, ঢাকায় ভালো লাগে না। কোথায় যাবেন? গ্রামে যাবো, একেবারে। ‘ভালো লাগে না’ বলেই কি ঢাকা ছাড়ছেন? কোনো উত্তর দিলেন না সে নারী।
পাশে থাকা মেয়েটি বললো- ঢাকায় ম্যালা খরচ।
এবার মেয়েটির মা অর্থাৎ সে নারীও মুখ খুললেন। বললেন, পাঁচ বছর আগে ঢাকায় এসেছিলাম। মেয়েদের মানুষ করবো। কতো স্বপ্ন ছিল! কিন্তু আর টিকতে পারলাম না। মাঝখানে গেল করোনা। এত খরচ চালানো যায় নারে বাবা।
উপরে বসে থাকা বড় মেয়েটিও তার মায়ের সঙ্গে কিছু কথা যোগ করলো। বললো, ৭ জনের পরিবার। ৪ বোন, বাবা, মা আর বোনের মেয়ে। আমরা দুই বোন মিরপুর ১০-এ গার্মেন্টে চাকরি করতাম। মেয়েদের বাবা নান্টু শেখও আয় রোজগার করতেন। সব মিলিয়ে প্রতি মাসে তাদের হাজার পঁচিশেক টাকা আসতো।
মিরপুর সাড়ে ১১-তে দুই রুমের ভাড়া বাসায় থাকতো পরিবারটি। সেখানে মাসে দিতে হতো ১২ হাজার টাকা। মেয়েটা মুখ ভার করে বললো- বাসাভাড়া দেয়ার পর যা থাকে তা দিয়ে আম্মার অসুখের চিকিৎসাই হয় না।
গত মাসেও পঞ্চাশ হাজার টাকা ধার করা লাগছে চিকিৎসার জন্য। অনেক টাকা ঋণ হয়ে গেছে এর বাইরেও। জমাবো আর কি! খাওয়া-দাওয়ার খরচ তো আছেই। লাভ কি ঢাকায় থেকে! সারাটা মাস দুশ্চিন্তায় থাকা লাগে।
কথা বলার সময় পিকআপের সামনে থেকে এগিয়ে এলেন পরিবারটির কর্তা নান্টু শেখ। মুখ ভার। কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন তিনি। পিকআপ ছাড়ার সময় হয়ে গেছে। জানা গেল তাদের বাড়ি বরিশাল।
নারীটি বললেন, যখন ঢাকায় এসেছিলাম তখন দুই মেয়ে আর স্বামীর ইনকামে কোনো রকম চলতে পারতাম। কিন্তু এখন কোনোদিক কুলাতে পারি না, খাবার-দাবারও হিসাব করে খেতে হয়। সবকিছুর দাম বেশি। আর কতো কষ্ট করে মানুষ! গ্রামে যে যাবো সেখানেও যেই খরচ আল্লাহ্ জানে কী আছে কপালে… কথা শেষ হবার আগেই জ্যাম ছুটলো।
পিকআপটা অন্য গাড়ির সারিতে অদৃশ্য হয়ে গেল। এমন শত শত পরিবারের কষ্টগুলো অদৃশ্যই থেকে যাচ্ছে দিনদিন। করোনা পরিস্থিতির পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। বেড়েছে প্রায় সব কিছুর দাম। বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। কমাতে হচ্ছে খরচ। সূত্র: মানবজমিন