Facebook
Twitter
WhatsApp

ঢাকায় ৩৬১০ চোরের তালিকা, আজ থেকে বিশেষ অভিযান

image_pdfimage_print

কোনো এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির হাল-হকিকত কেমন- এর যত নির্দেশক রয়েছে, তার মধ্যে একটি হলো চুরির পরিসংখ্যান। রাজধানী ঢাকায় একের পর এক ঘটছে দুর্ধর্ষ সব চুরি। পেশাদার চোর চক্রের সদস্যরা গাড়ি, বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিজেদের নজরে রেখে নামছে চুরিতে। পরিসংখ্যানও বলছে, রাজধানীতে চোরের সংখ্যা নেহাত কম নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তালিকায় ঢাকায় ৩ হাজার ৬১০ চোরের বাস। ঢাকা মহানগরের আয়তন ৩৬০ বর্গকিলোমিটার। সে হিসাবে প্রতি বর্গকিলোমিটারে তালিকাভুক্ত চোরের সংখ্যা ১১ জনের বেশি।

এসআইভিএস নামে একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে রাজধানীর ৫০ থানার চোর চক্রের একটি তথ্যব্যাংক তৈরি করেছে পুলিশ। ছবিসহ তৈরি করা ওই তালিকায় চুরির ধরন, কার বিরুদ্ধে কত মামলা, স্থায়ী-অস্থায়ী ঠিকানা, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও জামিনে নাকি কারাগারে- এসব তথ্য লিপিবদ্ধ আছে।

এদিকে আজ বুধবার থেকে ঢাকায় চার দিনের বিশেষ অভিযান শুরু করছে পুলিশ। চোর-ছিনতাইকারী, ওয়ারেন্টভুক্ত ও ধর্ষণ মামলার আসামি, মাদক ও অস্ত্র কারবারিদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে এ অভিযান চলবে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) ফারুক হোসেন বলেন, চুরির ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে মাঠ পর্যায়ের পুলিশকে বলা থাকে। বাসাবাড়ি খালি করে যাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে নাগরিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। আগে চুরির মামলার তদন্তে আগ্রহ কম থাকলেও এখন এ ধরনের অপরাধের তদন্ত সুচারুভাবে শেষ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিয়া রহমান বলেন, সমাজের নিম্ন আয়ের দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আর্থিক অনটনের কারণে সাধারণত ছোটখাটো চুরির সঙ্গে জড়ায়। আবার অনেকে মাদকের কারণে যে নিঃসঙ্গতায় ভোগে, সেই হতাশা থেকেও চুরি করছে। চুরি করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধরবে- এটার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কাউকে যাতে ওই পেশায় জড়াতে না হয়, সে ব্যাপারে রাষ্ট্র ও বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ নেওয়া। হঠাৎ হয়তো জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট বেড়েছে। তাদের জন্য কম মূল্যে খাবার সরবরাহের কর্মসূচি আরও বাড়ানো যেতে পারে।

গেল ২২ আগস্ট রাজধানীর ইস্কাটন এলাকায় পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোজাম্মেল আহমেদের বাসার গ্রিল কেটে প্রায় ৪০ লাখ দামের ৪৪ দশমিক ৯৫ ভরি স্বর্ণের গহনা নিয়ে যায় চোরের দল। গত মে মাসে ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকায় তিনটি দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে। মোহাম্মদপুর এলাকার একটি খালি বাসায় চুরির ঘটনায় ৩৭ ভরি স্বর্ণালংকার ও দুটি ল্যাপটপ লুট হয়েছিল। গত বছরের ২৯ অক্টোবর অধ্যাপক জাহানারা বেগমের বনানীর বাসা থেকে ছয়-সাত ভরি স্বর্ণ চুরি হয়। চুরির ঘটনা প্রায় নিয়মিত হলেও সবাই থানায় মামলা করতে যান না। আবার অনেক চুরির মামলায় তদন্তও ঠিকভাবে হয় না। কিছু মামলার আসামি হিসেবে চোর চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হলেও কিছুদিন পরই জামিনে বেরিয়ে একই অপরাধে জড়ায় তারা।

ঢাকায় চুরি সংক্রান্ত ঘটনার তথ্য বিশ্নেষণ করে দেখা যায়, চোরের সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি তেজগাঁও, মতিঝিল ও রমনা এলাকায়। তেজগাঁওয়ে চোর রয়েছে ৬৪৪ জন। আর রমনা ও মতিঝিলে ৫৫৭ জন করে। ওয়ারীতে ৪৮২, গুলশানে ৩৮০, মিরপুরে ৩৭৯, উত্তরায় ৩০৬ ও লালবাগে ৩০৫ জন। তাদের মধ্যে গ্রিল কাটা চোর ২০৪, তালা ও দরজা ভেঙে চুরি করছে এমন তালিকায় আছে ২৪৯ জন। গৃহপরিচারিকা ও গৃহশিক্ষক বেশে চোর রয়েছে ২৮৮ জন। প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে চুরি করছে ১৪৭ জন।

তথ্য বিশ্নেষণে উঠে এসেছে, ২০২১ সালে ঢাকায় সব মিলিয়ে চুরির ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৩৪৩টি। গত বছর চুরির ঘটনায় মাসে গড়ে ১২০টির মতো মামলা হয়েছে। তবে শুধু মামলা দিয়ে ঢাকায় চুরির সঠিক পরিসংখ্যান বের করা সম্ভব নয়। এর মধ্যে বাসাবাড়িতে চুরি হয় ৬৪৩, গাড়ি চুরি ৩৪০, তার চুরি ১৩, গরু চুরি ৪ ও অন্যান্য চুরির ঘটনা ৯৮৬টি। আর এ বছরের প্রথম ৯ মাসে ঢাকায় চুরির ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ২৫৫টি। এর মধ্যে বাসাবাড়িতে ৫৬১, গাড়ি চুরি ৩১৬, তার চুরি ১৭, গবাদি পশু চুরি ৪ ও অন্যান্য চুরির ঘটনা ৯১৮টি। এ বছর ঢাকায় গড়ে চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৩৯টি।

পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ঢাকায় চুরি বাড়ার কারণ- বেশ কয়েকজন তালিকাভুক্ত চোর জামিনে বেরিয়ে আবারও একই পেশায় জড়িয়েছে। পুলিশের লালবাগ বিভাগের তালিকাভুক্ত ৪৩ চোরের মধ্যে ৪১ জন জামিনে আছে। মতিঝিলের ৫৫ জনের মধ্যে ৫৩ জন জামিনে আর মিরপুরের তালিকার মাত্র দু’জন কারাগারে। জামিনে বাইরে আছে ৫৩ জন। তালিকাভুক্ত চোরদের মধ্যে যারা জামিনে রয়েছে- মালিবাগের বাবু, শাহাজাহানপুরের সজীব সরদার, ডেমরার সাইদুল ইসলাম আবীর, গুলবাগের কাওসার, শাওন চৌধুরী, সোহেল রানা, পারভেজ, রহিম, মোশারফ হোসেন ও জসীমউদ্দীন।

পুলিশের আরেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, ঢাকায় যারা চুরির সঙ্গে জড়িত তারা বেশিরভাগই পেশাদার। তাদের ছোট ছোট গ্রুপ রয়েছে। দলবদ্ধভাবে তারা চুরি করে। এরপর যা পায়, সেটা ভাগ করে নেয়। আরেকটি গ্রুপ আছে ‘মৌসুমি চোর’। তারা অধিকাংশ সময় ঢাকার বাইরে থাকে। অভাব-অনটন বা কাজের অভাব হলে ঢাকায় এসে চুরি করে পালিয়ে যায়। গত কয়েক মাসে রাজধানীতে চুরির ঘটনা বেড়েছে। দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে কেউ কেউ চুরিকে পেশা হিসেবে নিচ্ছে। চুরির মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করা সহজসাধ্য নয়। অনেক সময় হত্যার ক্লু বের করার চেয়ে চুরির মামলার তদন্ত শেষ করা কঠিন হয়ে যায়। কারণ, পেশাদার চোরচক্রের সদস্যরা তেমন কোনো ক্লুু রেখে যায় না। আবার যারা চুরির সঙ্গে সংশ্নিষ্ট তারা ভাসমান অপরাধী হিসেবে পরিচিত। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমেও তাদের খুঁজে বের করা দুরূহ। এমনকি অনেক সময় পুলিশও দীর্ঘদিন কোনো চুরির মামলা নিয়ে লেগে থাকতে চায় না।

তিনি আরও জানান, থানা পুলিশের দৈনন্দিন কাজের চাপে অনেকে পুরোনো চুরির মামলা নিয়ে মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না। সম্প্রতি পুলিশের অপরাধ পর্যালোচনা সভায় নতুন একটি তথ্য উঠে আসে। সেখানে বলা হয়, আগের চেয়ে দিনদুপুরে চুরির ঘটনা বাড়ছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের তথ্য বলছে, এ বছর ঢাকায় জানুয়ারিতে চুরির মামলা হয়েছে ১৬১, ফেব্রুয়ারিতে ১৮৪ ও মার্চে ২০৬টি। সেপ্টেম্বরে মামলা হয়েছে ২ হাজার ৩৪৬টি। অনেক সময় চুরির ঘটনা ঘটলেও মামলা না নিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পরামর্শ দেয় পুলিশ। কখনও চুরির ঘটনায় জাতীয় জরুরি সেবার হটলাইন ৯৯৯-এ কল দেন ভুক্তভোগীরা। এ বছরের প্রথম আট মাসে চুরির পর হটলাইনে সাড়ে সাত হাজার ফোন গেছে।

খবরটি শেয়ার করুন

Table of Contents

প্রধান উপদেষ্ঠা : আলহাজ্ব ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ এমপি, সংসদ-সদস্য ঢাকা ১৬,প্রকাশক : মোঃ মাসুদ রানা (জিয়া) ।সম্পাদক : শাহাজাদা শামস ইবনে শফিক।সহকারী সম্পাদক : সৌরভ হাসান সোহাগ খাঁন। 

Subscribe Now

নিউজরুম চিফ এডিটর : মোঃ শরিফুল ইসলাম রবিন।সম্পাদকীয় কার্যালয় : ১২০/এ মতিঝিল বা/এ, ৪থ তলা, সুইট-৪০২, ঢাকা- ১০০০বার্তা কক্ষ : ০১৬৪২০৭৮১৬৪ – বিজ্ঞাপনের জন্য : ০১৬৮৬৫৭১৩৩৭

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by www.channelmuskan.tv © 2022

x