Facebook
Twitter
WhatsApp

দিনাজপুরে বরকনে খোঁজার মেলা

image_pdfimage_print

‘নাক সেজেছে নাকছাবিতে/ কান সেজেছে দুলে/ কালো কপালে কুমকুম আর/ খোঁপার বাঁধন চুলে’- অঞ্জন দত্ত ও নিমা রহমানের জনপ্রিয় অ্যালবাম ‘গানে গানে ভালোবাসা’র এই গীতিকবিতার মতোই যেন দৃশ্যপট। গ্রাম্য এক মেলায় আদিবাসী কিশোরী-তরুণীরা এসেছেন সেজেগুজে। কপালে টিপ, ঠোঁটে লিপস্টিকের রঙিন ছোঁয়া, চুলে ফুলের বাহার, কেউ কেউ হাতেও রেখেছেন ফুলের তোড়া। হাতে চুড়ি ও গলায় মালা তো আছেই। সাজগোজে ছেলেরাও পিছিয়ে নেই। সবাই নিজের ভালো পোশাকটি পরে পরিপাটি হয়ে এসেছেন। কারণ এ তো শুধু মেলা নয়, মিলনমেলাও বটে। এখানে বিয়েতে ইচ্ছুক তরুণরা খোঁজেন উপযুক্ত পাত্রী, একইভাবে তরুণীরা খোঁজেন পাত্র। তাই আগামীর রঙিন সংসারের সুখস্বপ্নে বিভোর লাজুক হাসিমুখের তরুণ-তরুণীদের দেখা মেলে এখানে।

ব্যতিক্রমী এই মেলা বসেছে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায়। শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে আয়োজিত এই মেলাটি মূলত আদিবাসী সম্প্রদায়ের মিলনমেলা হিসেবেই পরিচিত। মেলায় যাওয়া মানুষের অধিকাংশই ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর সদস্য। তাঁরা বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা স্বজনদের সঙ্গে এখানে মিলিত হন, আনন্দে মাতেন। মেলার দোকান থেকে নানারকম কেনাকাটা করেন। তবে এই মেলার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ যে পাত্র-পাত্রী খোঁজা, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

বীরগঞ্জ উপজেলার ১১ নম্বর মরিচা ইউনিয়নের গোলাপগঞ্জ বাজারে অনুষ্ঠিত দুর্গাপূজার মণ্ডপের পাশেই মেলা বসে। তবে মেলার মূল অংশটা বিস্তৃত পাশের গোলাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। দুর্গাপূজা শুরুর দিনে মেলা শুরু হলেও তা জমে ওঠে দশমীর পরদিন থেকে, চলে লক্ষ্মীপূজা পর্যন্ত। সেই হিসাবে গতকাল শনিবার ছিল মেলার শেষ দিন। সরেজমিনে দেখা যায়, মেলায় উপচেপড়া ভিড় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর। মেলা ঘিরে বসেছে মাটির তৈরি খেলনা ও নানা পদের মিষ্টিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিসপত্রের দোকান। এক পাশে বসেছে নাগরদোলা।

আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নরেন কিসকু বলেন, এখানে শুধু আশপাশের না, দূরদূরান্ত থেকে আত্মীয়স্বজনরাও আসেন। এই সময়টাতে আমাদের বাড়িগুলো আত্মীয়স্বজনে পরিপূর্ণ থাকে। তাঁদের সবার সঙ্গে দেখা হয়, কুশল বিনিময় হয়। আবার আমাদের ছেলেমেয়েরা তাদের মনের মানুষও খুঁজে নেয়।

মেলায় যাওয়া রবীন ও হরেন মার্ডি বলেন, আমরা কয়েক বন্ধু মিলে পছন্দের পাত্রী খুঁজছি। যদি ভালো পাত্রী পাই, তাহলে বন্ধুর জন্য বিয়ের প্রস্তাব দেব। এ কারণে মেলাটি আমাদের কাছে একটু বেশিই আকর্ষণীয়।

বাবু রাম সরেন নামের এক যুবক বললেন, অনেক দিন ধরেই এই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমি ছোটবেলা থেকেই এই মেলা দেখছি। এই মেলাতে পছন্দ করে অনেক ছেলেমেয়েরই বিয়ে হয়েছে। বিষয়টি আমাদের বেশ ভালো লাগে।

বিয়েতে ইচ্ছুক তরুণ-তরুণী ও তাঁদের বন্ধু-স্বজনের উপস্থিতি ও হাসিঠাট্টায় মেলা সবসময় প্রাণচঞ্চল হয়ে থাকে। কোনো কোনো তরুণযুগলকে দেখা গেল ভিড়ের মধ্যে নিজেদের একান্ত আলাপন সেরে নিতে। কিছুটা বয়স্ক দর্শনার্থীরা কেনাকাটা করছেন অথবা স্বজনের সঙ্গে গল্প করছেন। কেউ আবার কিছুক্ষণ মিষ্টির স্বাদে ডুবে থাকতে ভিড় করেছেন দোকানে।

ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে এসেছেন অনেক মা-বাবা। তাঁদেরই একজন লদীকি টুডু বলেন, বাচ্চাদের নিয়ে এসেছি। অনেক কিছু খেলাম, আনন্দ করলাম। মেলা শেষ হলে মন খারাপ হয়। বেঁচে থাকলে আবার আসব এই মেলায়। এই মেলায় আমাদের সংস্কৃতির গানের আসর বসে। নাচ-গান খুবই ভালো লাগে।

মেলার আয়োজক কমিটির সদস্য শীতল মার্ডি বলেন, আদিবাসী সম্প্রদায়ের বিলুপ্ত হতে বসা সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতেই এই মেলার আয়োজন। মেলায় ছেলেরা তাঁদের পছন্দসই মেয়ে এবং মেয়েরা তাঁদের পছন্দসই ছেলেকে খুঁজতে আসেন। দু’জনের পছন্দ হলে পরে পরিবারকে জানিয়ে বিয়ের ব্যবস্থা হয়। সূত্র: সমকাল

খবরটি শেয়ার করুন

Table of Contents

প্রধান উপদেষ্ঠা : আলহাজ্ব ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ এমপি, সংসদ-সদস্য ঢাকা ১৬,প্রকাশক : মোঃ মাসুদ রানা (জিয়া) ।সম্পাদক : শাহাজাদা শামস ইবনে শফিক।সহকারী সম্পাদক : সৌরভ হাসান সোহাগ খাঁন। 

Subscribe Now

নিউজরুম চিফ এডিটর : মোঃ শরিফুল ইসলাম রবিন।সম্পাদকীয় কার্যালয় : ১২০/এ মতিঝিল বা/এ, ৪থ তলা, সুইট-৪০২, ঢাকা- ১০০০বার্তা কক্ষ : ০১৬৪২০৭৮১৬৪ – বিজ্ঞাপনের জন্য : ০১৬৮৬৫৭১৩৩৭

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by www.channelmuskan.tv © 2022

x