কিশোরগঞ্জে পানি সঞ্চালনের জন্য সরকারের দেওয়া কালভার্টের মুখ বন্ধ করে মাছ চাষ করায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দুই গ্রামের প্রায় চার’শ পরিবার। সদর উপজেলার ১১ নং দানপাটুলি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মহিষবেড় ও পাইকপাড়া গ্রামের ৪০০ পরিবারের প্রায় সাত ৬ হাজার মানুষ চারদিন ধরে পানিবন্দি রয়েছে।
সোমবার (৯ অক্টোবর) সকালে দ্রুত কালভার্টের মুখ খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে মহিষবেড় গ্রামে মানববন্ধন করেছে দুই গ্রামের শতাধিক লোকজন। প্রতিকার চেয়ে গত ৮ অক্টোবর জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
মানববন্ধনে ১নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘গত ছয় বছর ধরে কিছু অসাধু মাছ চাষি মহিষবেড় ও পাইকপাড়া গ্রামের কৃষকদের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে গ্রামের চারদিকে মাছ চাষের ফিসারি দিয়েছে। ফিসারির পাড় তৈরি করার জন্য সরকারের দেওয়া পানি সঞ্চালনের কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। যার কারণে অল্প বৃষ্টিতে এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়।’
সাবেক ইউপি সদস্য দিলীপ চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘অসাধু মাছ ব্যবসায়ীদের চক্রের কারণে এলাকাবাসি পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। এই ওয়ার্ডে তিনটি মসজিদ, একটি মন্দির, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসা রয়েছে। পানির সঞ্চালন বন্ধ থাকায় রাস্তা তলিয়ে গিয়েছে। যার কারণে মসজিদে নামাজ আদায় করা, মন্দিরে প্রার্থনা করা, বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে।’
সরকারি কালভার্ট বন্ধ করে মাছ চাষ, পানিবন্দি ৪০০ পরিবার
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সুযোগ আছে কিনা জানতে চেয়েছে মার্কিন প্রতিনিধিদল : কাদের
তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, ‘কালভার্ট বন্ধ থাকায় জলাবদ্ধতার কারণে এলাকার শিশুদের পানিতে পড়ে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে। পানির নিচে থাকায় রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে। বেশ কয়েকবার স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেও সমাধান হয়নি। ছোট বড় পাঁচটি সরকারি কালভার্ট মাটি দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে মাছ চাষিরা। শুধু তাই নয় রেলওয়ের ব্রীজ পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে তারা।’
স্থানীয় বাসিন্দা মো. মজলু মিয়া বলেন, ‘ফিসারির কারণে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য সাবেক চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ফিসারির মালিকদের নিয়ে ৪টি সালিশি বৈঠক হয়েছে। সালিশ বৈঠক করা হলেও এর সমাধান হয়নি। এখন অবস্থা ভয়ঙ্কর রুপ ধারণ করেছে। রান্না করে খাওয়া দাওয়া করা যাচ্ছে না। রান্নার চুলায় পানি প্রবেশ করেছে। নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভয় হয়। মাঝে মাঝে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে এলাকার অনেক মানুষ। স্কুল মাদ্রাসায় যেতে না পারায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বন্ধ রয়েছে।’
পানি নিষ্কাশনের কালভার্ট বন্ধের অভিযোগ অস্বীকার করে মৎস্য চাষি নজরুল মিয়া বলেন, ‘আমি চার বছর ধরে মাছ চাষ করে আসছি। এর আগে যারা মাছ চাষের দায়িত্বে ছিলেন তারা পানি নিষ্কাশনের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন। খোলার প্রয়োজন হলে এখনই খুলে দেব।’
মৎস্য চাষি হুমায়ুনও কালভার্ট বন্ধের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আরজু মিয়া বলেন, ‘এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে ফিসারিগুলো করা হয়েছে। বিভিন্ন সময় মাছ চাষিদের নিয়ে বসে সমাধান করার চেষ্টা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছি। বর্তমানে ভারী বৃষ্টি হওয়াতে সমস্যাটা বড় আকাড় ধারণ করেছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।’
১১নং দানাপাটুলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাসুদ মিয়া বলেন, ‘পানি নিষ্কাশনের বিষয়টি প্রশাসনের মাসিক সভায় উত্থাপন করেছি। শুধু মহিষবেড় ও পাইকপাড়া নয় অনেক স্থানে এমন অবস্থা বিরাজ করছে। আমি অনেকবার কালভার্ট ও খাল খনন করতে গিয়ে বাঁধার সম্মুখীন হয়েছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে পানিবন্দির বিষয়টি জানানোর পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তদন্ত কমিটির কোনো দেখা মিলেনি। স্থানীয় লোকজন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমি ফিসারির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে সমাধনের চেষ্টা করবো।’
এদিকে অভিযোগের বিষয়টি জানা নেই বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মর্কতা মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের কালভার্ট বন্ধ করে দেওয়া ও পানি নিষ্কাশনে যেন কোন অসুবিধা না হয় সেই বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া আছে। মহিষবেড় ও পাইকপাড়া গ্রামের পানি নিষ্কাশনের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’