ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় জীবিত উদ্ধার হওয়া হাসি বেগম আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে ফরিদপুর আমলি আদালতের (সদরপুর) বিচারক গৌর সুন্দর বিশ্বাস হাসির জবানবন্দি নথিভুক্ত করেন। জবানবন্দি দিয়ে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে ময়মনসিংহের নান্দাইলের পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে চলে যান হাসি। পরে স্ত্রী হাসিকে হত্যার মিথ্যা অভিযোগে কারাগারে থাকা স্বামী মোতালেব শেখ মুক্ত হয়ে নিজ বাড়িতে ফেরেন।
এসব তথ্য জানিয়েছেন হাসি বেগমের বাবা হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, আমার মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক। তার নিজস্ব চিন্তা-চেতনা আছে। যেই মেয়ে তার ৭ বছর বয়সী একটি ছেলে রেখে পরপুরুষের হাত ধরে চলে যেতে পারে তার ব্যাপারে আমার বলার কিছু নেই। আজ কোর্টে জবানবন্দি দিয়ে তার প্রেমিকের সঙ্গে চলে গেছে।
তিনি আরো বলেন, শুনেছি স্বামীকে তালাক দিয়ে ওই প্রেমিককে বিয়ে করবে। তার সাত বছর বয়সী ছেলে বাবার কাছে থাকবে।
হাসি বেগম ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের শৌলডুবী গ্রামের হাবিবুর রহমানের মেয়ে এবং একই উপজেলার চরবিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বড় বাড়ি গ্রামের মোতালেব শেখের স্ত্রী। হাসির পরকীয়া প্রেমিক মোস্তাকিম ময়মনসিংহের নান্দাইলের বাসিন্দা।
জানা গেছে, গত ৭ সেপ্টেম্বর বাড়ি থেকে বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার কথা বলে বের হন হাসি বেগম। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। তার কোনো হদিস না পাওয়ায় মেয়েকে হত্যার পর মরদেহ ডোবায় ফেলে দেন জামাতা- এমন অভিযোগ এনে থানায় মামলা করেন হাসির বাবা হাবিবুর রহমান। এর তিন দিন পর ১৪ সেপ্টেম্বর থানায় পাল্টা একটি অভিযোগ দেন মোতালেব শেখ। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, তার স্ত্রী নগদ টাকাসহ অন্তত ১০ লাখ টাকার জিনিসপত্র নিয়ে তার বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে চলে গেছেন।
পুলিশ জানায়, গত ২০ সেপ্টেম্বর অজ্ঞাত পরিচয় এক নারীর মরদেহ পাওয়া যায়। সেটি হাসির বলে শনাক্ত করে দাফনও করা হয়। এর পরদিন ২১ সেপ্টেম্বর স্ত্রীকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত হিসেবে গ্রেপ্তার হন স্বামী মোতালেব শেখ। গত ২৫ সেপ্টেম্বর হাসিকে জীবিত অবস্থায় ময়মনসিংহের নান্দাইল এলাকা থেকে আটক করে সদরপুর থানা পুলিশ। হাসি জীবিত আছেন বলে আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার পর তিনি মুক্তি পান তার স্বামী মোতালেব শেখ।
সদরপুর থানার ওসি মামুন আল রশিদ বলেন, হাসি আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে সব কিছু পরিষ্কার করায় সকল আইনি বাধা কেটেছে। তার স্বামী মোতালেব শেখ মুক্তি পেয়েছেন। গত ১৪ সেপ্টেম্বর হাসির স্বামী মোতালেব স্ত্রীর বিরুদ্ধে থানায় ১০ লাখ টাকার সম্পদ নিয়ে যাওয়ার যে অভিযোগ দিয়েছিলেন সেটি ছিল একটি পাল্টা অভিযোগ। হাসির জবানবন্দির মাধ্যমে সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যাওয়ায় ওই অভিযোগটি মামলা হিসেবে আর রেকর্ড করা হবে না।
তিনি আরো বলেন, গত ২০ সেপ্টেম্বর আদমপুরে যে মরদেহটি পাওয়া যায় সেটির পরিচয় এখনো জানা যায়নি। এ ব্যাপারে সকল থানায় তথ্য পাঠানো হয়েছে।