ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ওয়ানডে বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আর ১ সপ্তাহও বাকি নেই। ১০ দল নিয়ে অনুষ্ঠেয় এই টুর্নামেন্টে বলে-ব্যাটে আলো ছড়ানোর জন্য প্রস্তুত ক্রিকেটাররা। টুর্নামেন্টে বিরাট কোহলি, বেন স্টোকস বা সাকিব আল হাসানদের দিকে যেমন নজর থাকবে, তেমনি নতুন প্রজন্মের কিছু খেলোয়াড়ও তাদের দিকে আলো কেড়ে নিতে পারেন। যারা এই বিশ্বকাপেই প্রথম খেলতে যাচ্ছেন। এমন ৫ জন তরুণ তারকাকে নিয়েই সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএফপি।
নুর আহমেদ (আফগানিস্তান)
এবারের বিশ্বকাপে বিশেষ নজর রাখতে হবে ১৮ বছরের আফগান বাহাতি রিস্ট স্পিনার নুর আহমেদের ওপর। দারুণ অ্যাকশনের সঙ্গে যথাযথ গতিতে নিয়ন্ত্রণ রেখে বল করতে পারেন তিনি। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই আফগানিস্তানের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সুযোগ হয়েছিল এই নুরের। ১৭ বছর বয়সে গত বছর শ্রীলংকার বিপক্ষে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হয় এই তরুণের। আইপিএলে গুজরাটের হয়ে রশিদ খানের সঙ্গে দিয়েছেন বোলিংয়ের নেতৃত্ব।
নুরকে নিয়ে রশিদ খান বলেন, ‘এই তরুণ শুধু শিখতে চায়। সে এখন সুযোগ পেয়েছে এবং আমি খুব খুশি সে যেভাবে পারফর্ম করছে। আফগানিস্তান ক্রিকেটের জন্য এটি ভালো খবর।’
মাথিশা পাথিরানা (শ্রীলংকা)
২০১৯ বিশ্বকাপে লাসিথ মালিঙ্গার অবসরের পর থেকেই শ্রীলংকা এমন এক বোলারকে খুঁজছে যিনি উইকেট এনে দিতে পারেন এবং ডেথ ওভারে ভালো বোলিং করতে পারেন। মাথিশা পাথিরানার মধ্যেই সেই বিকল্প খুঁজে পেতে চাইছে তারা। মালিঙ্কাকে অনুসরণ করেন, তাই ‘বেবি মালিঙ্গা’ নামেই তাকে ডাকেন সমর্থকরা। ২০২২ সালের আইপিএলে তাকে দলে টেনে নিয়েছিলেন চেন্নাই সুপার কিংসের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। ১৯৯৬ সালের পর দ্বিতীয়বার ট্রফি উঁচিয়ে ধরতে পাথিরানার পারফরম্যান্স খুব দরকার শ্রীলংকার।
তাকে নিয়ে লংকান কোচ ক্রিস সিলভারউড বলেছেন, ‘তাকে যেগুলো শেখানো হয় সে এগুলো খুব ভালোভাবে ধরতে পারে এবং দ্রুতই ম্যাচে তা প্রয়োগ করতে পারে। সে এটা তার মতো করেই করে।’
গাস অ্যাটকিনসন (ইংল্যান্ড)
২০১৯ সালে ইংল্যান্ড যখন বিশ্বকাপ জেতে, তখন দলের তুরুপের তাস ছিলেন ঘণ্টায় ৯০ মাইলের ওপরে গতিতে বল করতে পারা দুই বোলার জোফরা আর্চার এবং মার্ক উড। এবার উড থাকলেও ইনজুরি থেকে সেরে না ওঠার কারণে স্কোয়াডে নেই আর্চার। এবার সেই বাটন পেসার গাস অ্যাটকিনসনের হাতে। ২৫ বছর বয়সী এই পেসার দারুণ কিছু স্পেলে মুগ্ধ করেছেন সমর্থকদের। বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে ৩ ম্যাচে মাত্র ১ উইকেট পেয়েছেন এই পেসার। তবে তার ঘণ্টায় ৯৫ মাইল বেগের বলে আশা দেখছেন ইংলিশ ক্রিকেট সমর্থকরা।
তেজা নিদামানুরু (নেদারল্যান্ডস)
নেদারল্যান্ডসের ক্রিকেটার নিদামানুরুর জন্ম ভারতের অন্ধ্র প্রদেশে, বেড়ে উঠেছেন নিউজিল্যান্ডে। তবে ভাগ্যের ফেরে আসন্ন বিশ্বকাপে খেলছেন নেদারল্যান্ডসের হয়ে। ২০২২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক হয় ২৯ বছরের নিদামানুরুর। অভিষেকেই হাফ সেঞ্চুরি করে দারুণ কিছুর জানান দেন এই ক্রিকেটার। তবে তিনি আলো কাড়েন জিম্বাবুয়েতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে। দুই বারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওইদিন ৭৬ বলে ১১১ রানের ইনিংস খেলেন নিদামানুরু। এই ইনিংসে ভর করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের করা ৩৭৫ রানের বিশাল সংগ্রহ ছুঁয়ে ফেলে ডাচরা। পরে সুপার ওভারে জিতে তো বিশ্বকাপ থেকেই ওয়েস্ট ইন্জিজকে ছিটকে দেয় তারা।
তাওহীদ হৃদয় (বাংলাদেশ)
বয়সভিত্তিক দল থেকেই বাংলাদেশের নির্বাচকদের নজরে ছিলেন তাওহীদ হৃদয়। ৫০ ওভারের ক্রিকেটের জন্য বাংলাদেশের আদর্শ একজন ক্রিকেটার হয়ে উঠতে পারেন তিনি। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠতে কব্জির ওপর নির্ভর করে খেলতে পছন্দ করা এই ব্যাটারের দিকে তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। শ্রীলংকায় ফ্রাঞ্চাইজি লিগ খেলতে গিয়ে বেশ নাম কুড়িয়েছেন এই ব্যাটার। গত মার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় হৃদয়ের। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হয় ওয়ানডেতে অভিষেক। ১৭ ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এরই মধ্যে ৫টি হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন হৃদয়।
হৃদয়কে নিয়ে বাংলাদেশের সহকারী কোচ নিক পোথাস বলেছেন, ‘স্কিলের দিক দিয়ে হৃদয়ের মান অনেক উঁচুতে। তার প্রচুর সম্ভাবনা এবং শেখার ইচ্ছা আছে। সে কী করতে পারে সেটি দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি।’