Facebook
Twitter
WhatsApp

৫ ভুলে চরম খেসারত দেবেন পুতিন

image_pdfimage_print

ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের পক্ষে নানা সাফাই দেয়ার চেষ্টা করছে রাশিয়া। ঠিক যেমন এখন থেকে দুই দশক আগে ইরাক আগ্রাসনের পর অজুহাত দাঁড় করার চেষ্টা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের মতো মস্কোর এ অজুহাত দাঁড় করানোর চেষ্টা এটাই প্রমাণ করে যে, বিশ্ব শক্তিগুলো সাম্রাজ্যবাদী ঔদ্ধত্যের পরিণতি থেকে কখনোই শিক্ষা নেয়নি। নিজেদের ভুল থেকেও নয়, অন্যদের থেকেও নয়।

এটা প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সাম্রাজ্য থেকে শুরু করে হালের ফরাসি, জার্মান ও ব্রিটিশ-সবার ক্ষেত্রেই সত্য। প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই ভূ-রাজনৈতিক দাম্ভিকতা থেকে রাজনৈতিক নির্বুদ্ধিতা জন্ম নিয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ এখন রাশিয়ার স্রোতের প্রতিকূলে বইতে শুরু করেছে।

 

ফলে ইউক্রেন অভিযানে ক্রেমলিন যে দ্রুত বিজয় অর্জনের প্রত্যাশা করছিল, তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে এ ব্যর্থতা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দাম্ভিক হিসাব-নিকাশের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। কারণ এ সামরিক অভিযানে অন্তত পাঁচটি বড় ভুল করেছেন তিনি।

প্রথমত
পুতিন এ যুদ্ধের জন্য তার সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি নিয়ে উচ্চ ধারণা পোষণ করেছিলেন। সেই সঙ্গে জোরপূর্বক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় রুশ নাগরিকদের আকাঙ্ক্ষা ঠিকভাবে পড়তে ভুল করেছেন। ফলে সামরিকভাবে পিছিয়ে থাকা অথচ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ একটি শত্রু বাহিনীর বিরুদ্ধে অপমানজনক পরিস্থিতির মুখে পড়ছে রাশিয়া।

ইউক্রেনীয়রা যখন স্বেচ্ছায় যুদ্ধে যোগ দিচ্ছে এবং দেশের জন্য অকাতরে প্রাণ উৎসর্গ করছে, রুশ সেনারা তখন যুদ্ধের ময়দান থেকে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করছে। শুধু তাই নয়, যুদ্ধে যোগ দেয়ার ভয়ে আগেই দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে রুশ পুরুষেরা।

দ্বিতীয়ত
ইউক্রেন নিয়ে পুতিনের দ্বিতীয় ভুল হিসাবে-নিকাশটি হচ্ছে—এমন বিশ্বাস যে কিয়েভ কয়েক দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করবে। অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদীর মতোই একই ভুল তিনিও করেছেন। দখলদারীর বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয়দের প্রতিরোধ ও স্বাধীনতা রক্ষার অঙ্গীকারকে ছোট করে দেখেছিলেন পুতিন।

তিনি মনে করেছিলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের ইতিহাস এক বলে তাদের ভবিষ্যতও এক ও অভিন্ন হবে। নিজেদের স্বাধীন জাতীয় পরিচয় নিয়ে ইউক্রেনের একটা সন্দেহ ছিল। কিন্তু পুতিনের যুদ্ধে তার অবসান হয়েছে এবং ইউক্রেনীয়দের দেশপ্রেম এমনভাবে জাগিয়ে তুলেছে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি।

তৃতীয়ত
পুতিনের তৃতীয় ভুল ন্যাটো ও পশ্চিমাদের সামর্থ নিয়ে। রুশ প্রেসিডেন্ট মনে করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পর ‘মেইক আমেরিকা গ্রেইট এগেইন’ নীতির কারণে পশ্চিমা সামরিক জোট দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে ন্যাটোর প্রতিক্রিয়া কিছুটা ধীর হবে।

রুশ নেতা আরও মনে করেছিলেন, রুশ তেল ও গ্যাসের ইউরোপের নির্ভরতার ফলে ইউক্রেনের ব্যাপারে মস্কোর সঙ্গে চাইলেও সম্পর্ক ছিন্ন করা তাদের জন্য কঠিন হবে। পুতিনের এই হিসাব-নিকাশ ভুল প্রমাণিত হয়েছে। সামরিক অভিযানের কারণে আগ্রাসী রাশিয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে।

চতুর্থত
পুতিন মনে করেছিলেন, আফগানিস্তান ও ইরাকে অর্থনৈতিক ও সামরিক বিপর্যয় এবং চীনের উত্থানের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা পতনোন্মুখ। ফলে ইউক্রেন সংকটে ওয়াশিংটন তেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে না। এখানেও তিনি ভুল প্রমাণিত হয়েছেন।

২০০৮ সালে জর্জিয়ায় রাশিয়ার অনুপ্রবেশ, ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা ও পশ্চিমা দেশগুলোর নির্বাচনগুলোতে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের ঘটনায় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতো ইউক্রেন ইস্যুতে দুর্বল প্রতিক্রিয়া দেখাননি বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযানকে মস্কোর বিরুদ্ধে পশ্চিমা শক্তিকে একত্রিত করার সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করেছেন এবং রাশিয়ার অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছেন।

পঞ্চমত
পুতিনের আত্মাভিমান ও ‘আমিই সঠিক আর সব ভুল’ এমন ভাব। ব্যক্তিগত ও জাতিগত গরিমায় তাড়িত হয়ে একটা উদার পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে একটা আন্তর্জাতিক যুদ্ধ শুরু করেছেন।

একই সঙ্গে তিনি একজন নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক হিসেবে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির প্রতি সামান্যই গুরুত্ব দিচ্ছেন এবং অন্তর্গত বিশ্বাস ও গোঁড়া মতবাদেই তিনি নিজেকে পরিচালিত করছেন।

প্রকৃতপক্ষে
যেসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে পুতিন অভিযোগ এনেছিলেন, ইউক্রেনে সেগুলোই তিনি করছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মনোভাবকে ক্ষুণ্ন করেছেন। তবে এখানে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তির ভণ্ডামির কথাও বলতে হয়।

পুতিন হয়তো উন্মাদ হয়ে যেতে পারেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রকে কোনোভাবেই নিষ্পাপ বলা যাবে না। প্রতিবেশীদের ওপর পুতিনের হস্তক্ষেপ বন্ধে তারা সোচ্চার হয়েছিল। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যকে পুনর্নির্মাণের নামে সেখানে কয়েক দশক ধরে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

খবরটি শেয়ার করুন

Table of Contents

প্রধান উপদেষ্ঠা : আলহাজ্ব ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ এমপি, সংসদ-সদস্য ঢাকা ১৬,প্রকাশক : মোঃ মাসুদ রানা (জিয়া) ।সম্পাদক : শাহাজাদা শামস ইবনে শফিক।সহকারী সম্পাদক : সৌরভ হাসান সোহাগ খাঁন। 

Subscribe Now

নিউজরুম চিফ এডিটর : মোঃ শরিফুল ইসলাম রবিন।সম্পাদকীয় কার্যালয় : ১২০/এ মতিঝিল বা/এ, ৪থ তলা, সুইট-৪০২, ঢাকা- ১০০০বার্তা কক্ষ : ০১৬৪২০৭৮১৬৪ – বিজ্ঞাপনের জন্য : ০১৬৮৬৫৭১৩৩৭

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by www.channelmuskan.tv © 2022

x