প্রবল গণপ্রতিরোধে ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়। পরিবর্তিত সরকার ব্যবস্থার আগে আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে দেশের অর্থনৈতিক খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার প্রভাবে দেশে বেড়েছে বাণিজ্য ঘাটতি। অন্যদিকে, বিদেশি ক্রয়াদেশ কমায় ভোগান্তির শিকার হয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, অস্থিতিশীল সময়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর বৈদেশিক ক্রয়াদেশ বাতিল হওয়ায় মারাত্মকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তারা। অনেকেই এ সময় কারখানার শ্রমিকদের বেতন দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তাই থার্ড কোয়ার্টার তথা সেপ্টেম্বরে ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধে সময় ৬ মাস বৃদ্ধি করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে দাবি তুলেছেন তারা।
পরিবর্তিত সরকার ব্যবস্থায় গত আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বা অর্থনৈতিক খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময়ে সব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২০-২৫ শতাংশ অর্ডার বাতিল হয়। তারপরে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হলে ব্যবসায়ীরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়েন। অন্তর্র্বতী সরকারের আমলে নতুন করে তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিক অসন্তোষ শুরু হলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। পরিস্থিতি তুলে ধরে অনেক ব্যবসায়ী গণমাধ্যম কর্মীর মাধ্যমে সরকারের কাছে বিভিন্ন দাবিও তুলে ধরেন। ব্যবসা টেকাতে ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অন্তর্র্বতী সরকারের উপদেষ্টাদের চিঠি দিয়ে ঋণসুবিধা চেয়েছে।
আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করছি, প্রায় ২০-২৫ শতাংশ অর্ডার হাতছাড়া হয়েছে। আন্দোলনের আগে যে অর্ডারগুলো নিয়ে বায়ারদের সঙ্গে আমাদের কথা হচ্ছিল সেগুলো কিন্তু আমরা পাইনি।’
পরিস্থিতির উন্নয়নের বিকল্প নেই জানিয়ে তিনি বলেন, পোশাক খাতে স্বস্তি আনতে দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। ব্যাংকিং খাতের সংকট দূর করার পাশাপাশি আমদানি ও রপ্তানি বাধাগ্রস্ত করে, এমন রাজস্ব নীতি বাতিল করারও আহ্বান জানান মোহাম্মদ হাতেম। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হলে সব ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল।
তিনি আরও বলেন, দেশে বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে অর্থনীতি সচল রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের সুযোগ দিতে হবে। বর্তমানে অনেক গার্মেন্টস টেক্সটাইল ব্যবসায়ীদের ক্রয়াদেশ বাতিল এবং কল-কারখানা বন্ধ হওয়াতে মারাত্মক বিপাকে পড়েছেন এই কথা উল্লেখ করে মেয়াদি ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় বাড়ানো হলে ব্যবসায়ীদের ব্যবসার সুযোগ প্রসারিত হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, গেল অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ৩ হাজার ৩০৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়, যা তার আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ শতাংশ কম। এবারে অনেক কমবে। বৈদেশিক ক্রয়াদেশ বাতিল হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। নতুন করে পোশাক খাতে অস্থিতিশীলতায় অনেকেই এ সময় কারখানার শ্রমিকদের বেতন প্রদানে অপারগ হয়ে পড়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নির্দেশনা দিয়েছিল যে, ব্যবসায়ীদের গার্মেন্টসের বেতন-ভাতাদি প্রদানে যেন সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হয় কিন্তু এক্ষেত্রে অনেক ব্যাংক সেই নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে ব্যবসায়ীদের আরও বিপদে ফেলেছেন। এ অবস্থায় বেতন-ভাতাদি না দেওয়াতে অনেক মিল-কারখানায় চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে এবং কয়েক জায়গাতে ফ্যাক্টরি বন্ধ রাখা হয়েছে। এর উপর যদি এই ঋণের বোঝা বহন করতে হয় তবে ব্যবসায়ীদের পক্ষে ব্যাংকের নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সচল রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই তাদের দাবি, ব্যবসায়ীরা থার্ড কোয়ার্টার তথা সেপ্টেম্বর কোয়ার্টারের ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা ৬ মাস বৃদ্ধি করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে জোর আবেদন জানান তারা।