পল্লবীর মুখোশধারী ইউসুফ রাজধানীর মিরপুর এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ ইউসুফ ভূঁইয়া নামে এক ধুরন্ধর ধান্দাবাজ রাজনৈতিক ছত্রছায়াকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের জীবনকে করে তুলেছে অতিষ্ঠ।
কথায় কথায় মামলা হামলা আর থানায় যেয়ে নাম উঠানো আর কাটানো তার নিত্য দিনের পেশা। বিপদগামী কতিপয় এসআই আর এএসআইদের দিয়ে ভূয়া গ্রেফতারী অভিযানের নাটক সাজিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতানোই তার মূল পেশা। এর সাথে আছে ভূয়া দলিল প্রস্তুত করে ফাঁকা প্লট, ফ্লাট আর বাড়ি দখলের মতো গর্হিত অপরাধ।
সদ্য বিতাড়িত শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে নিজেকে ঢাকা ১৬ আসনের সাবেক এমপির কাছের লোক পরিচয় দিয়ে সে তার দখল ও মামলা বাণিজ্য চালিয়ে গেছে। এখন আবার ছাত্র জনতার আন্দোলনে দেশের প্রেক্ষাপট চেঞ্জ হতেই সে নিজেও ভোল পাল্টে ফেলেছে।
আরও পড়ুন : ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করায় বিএনপির নেতা কর্মীদের আনন্দ মিছিল
মিরপুর পল্লবীর কতিপয় ধান্দাবাজদের সাথে এখন তার হেব্বি দস্তি। জনশ্রুতি আছে সে তার সুন্দরী স্ত্রীর রূপের যাদুকে কাজে লাগিয়ে হয়ে উঠেছিলো পল্লবী রূপনগর এলাকার সাবেক এমপির আপনজন। এমপির অফিস আর বাসাবাড়িতে ছিলো তার স্ত্রী আজিমুন্নাহারের অবাধ যাতায়াত। আর এই সখ্যতা থেকেই এমপির মাধ্যমে ইউসুফ ভূঁইয়া পয়সায় বিনা ইন্টারভিউতে বাগিয়ে নেয় তার স্ত্রীর জন্য কালশী ইসলামীয়া হাইস্কুলের শিক্ষিকার চাকরি।
সম্প্রতি ৫ই আগস্ট দেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন হওয়ার পর মিরপুরের বিভিন্ন স্থানে যেসব গোলাগুলি, বোমাবাজি, লুটপাট, দখল ও দাঙ্গা হাঙ্গামায় যেসব মানুষ নিহত আহত হয়েছে তাদেরকে নিয়ে এবার শুরু হয়েছে ইউসুফ ভূঁইয়ার অভিনব বাণিজ্য। বিক্ষিপ্ত এসব ঘটনার মামলার কাগজ কোর্ট থেকে তুলে ঠিকানা খুঁজে খুঁজে আসামীদের বাড়ি বাড়ি যেয়ে নাম মামলা থেকে কাটিয়ে দেওয়ার নামে শুরু করেছে নগ্ন বাণিজ্য। তার সাথে এসব অনৈতিক কাজে সার্বক্ষণিক সঙ্গ দিচ্ছেন মিরপুর ও পল্লবী এলাকার বিপথগামী কতিপয় টাউট। এদের এই অভিনব মামলা বাণিজ্যের কারণে অনেক মানুষ নি;স্ব হতে চলেছে। বিভিন্ন আসামীদের বাড়ি বাড়ি একাধিকবার যেয়ে মোটা অংকের টাকা দাবি করাই অনেকে বাসা পরিবর্তন করে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। অনেকেই আবার এই ইউসুফ ভূঁঞা ও তার দলবলের ধারাবাহিক চাঁদাবাজীর হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে স্থায়িভাবে চলে গেছেন গ্রামের বাড়িতে।
হাজারো অপরাধে অরাধী এই ইফসুফ ভূঁইয়ার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায় এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সে হাত পাকিয়েছে অনেক আগে থেকেই। সে যখনই কোনো বাসা বা ফ্লাট ভাড়া নেয়, তখন সেখানে দুচ্চার মাস থাকার পরই নকল ইলেকট্রিক বিল আর পানির বিলের কাগজ জোগাড় করে তেজগাঁও সাব রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সের কতিপয় দ্র্নুীতিগ্রস্থ দলিল লেখক ও সাব রেজিস্টার অফিসের পিয়ন উমেদার বা মোহরার দিয়ে সাব রেজিস্ট্রাদের সই নকল করে ছিল ছাপ্পর বসিয়ে উক্ত বাসা বা ফ্লাট তার বলে আওয়াজ তুলতে থাকে। তার এসব অনৈতিক কর্মকান্ডে তার কাছ থেকে টাকা খেয়ে কিছু মদ্যপ ও ইয়াবা খোর এবং কিছু টাউট বাটপার এই বাড়ি বা ফ্লাট ইউসুফের বলে গলা মেলাতে থাকে।
অনুসন্ধানে আমাদের কাছে উঠে আসে , পল্লবীর এই ধান্দালী ব্যবসা ইউসুফের কাছে নতুন কিছু নয়। সে ১৯৯৮ সালে জনৈক সোনা মিয়ার নিকট থেকে মাসিক ৩৩০০ টাকা ভাড়া চুক্তিতে ৮ গুণ ৯ সাইজের দোকানঘর ভাড়া নিয়ে কিছুদিন ব্যবসা করতে থাকে। এরপর ২০০২ সাল থেকে সে আর হাজী সোনা মিয়াকে ভাড়ার টাকা না দিয়ে নিজেকে ঘর মালিক দাবি করতে থাকে। ওখানেই ওই সময় ইউসুফ ভূঁঞা ওই ঘরের কাগজপত্র হিসেবে নকল কারেন্ট বিল, নকল পানির বিল ও ভূয়া দলিল সাবমিট করলেও পরে পল্লবী থানার ওই সময়ের তদন্ত কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেন মোল্লার সুক্ষু তদন্তে সব কিছু পরিস্কার হয়ে যায় এবং ইউসুফ ভূঁঞার জারিজুরি ও গোমড় ফাঁস হয়ে যায়।
এদিকে মিরপুর পল্লবী এলাকার অসংখ্য ভূক্তভোগী ইউসুফ ভূঁঞার দখলবাজী ও মামলা বাণিজ্যের সঠিক বিচারের দাবিতে মিরপুর ও পল্লবী থানা ওসির মাধ্যমে ডিএমপি কমিশনারের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।