বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি হত্যা মামলায় তরুণ নাট্যনির্মাতা রাফাত মজুমদার রিংকুর জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ছানাউল্যাহ শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর গুলশানে নাইমুর রহমান নামের এক ছাত্র হত্যা মামলায় এ আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাজু আহমেদ আসামি রিংকুকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে।
রিংকুর পক্ষে তার আইনজীবী রিপন কুমার বড়ুয়া জামিন আবেদন করে বলেন, মামলার কোথাও আসামির বিরুদ্ধে একটা শব্দও নাই, কোনো অভিযোগ নাই। বলা হচ্ছে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। গত ১৪-১৫ বছর ধরে নাটল নির্মাণ, চলচ্চিত্র পরিচালনা করছেন। অনেক কাজ, রানিং, পেন্ডিং। নতুন নির্মাতা হিসেবে কাজ করে সুনাম অর্জন করেছেন। ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নাই। তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। ভালো কাজ করার কারণে কেউ ষড়যন্ত্র করে তাকে গ্রেপ্তার করিয়েছে হয়তো। ৫ আগস্ট আন্দোলনের পক্ষে পোস্টও দিয়েছেন রিংকু।
তখন বিচারক বলেন, ওটা তো লাস্ট দিন ছিল। পরে আইনজীবী বলেন, অনেক কাজ হাতে রয়েছে। জামিন না দিলে বন্ধ হয়ে যাবে।
তখন রাষ্ট্রপক্ষে এক পুলিশ কর্মকর্তার পাশাপাশি বিএনপিপন্থী আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকীও জামিনের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নরপিচাশের মতো গুলি করে হাজারের অধিক লোককে খুন করেছে। আহত বিশ হাজারের অধিক। এ আসামি সাবেক ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। আর নির্মাতা, অভিনেতা, নায়ক-নায়িকা রাজনীতির বাইরে না। বিপদে পড়লে বলে রাজনীতিতে জড়িত না। যুবলীগের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তার ছবি আছে।
পরে সেই ছবি আদালতে দেখানো হয়।
এরপর রিংকু আদালতকে বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম।’ তখন বিচারক বলেন, বিফোর রিজাইন না আফটার রিজাইন। তখন আইনজীবী ফারুকী রাজনীতিতে জড়িত থাকার বিষয়টি আবারও আদালতকে জানালে বিচারক বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে নানা মত, নানা দল থাকতেই পারে। এটা কোনো অপরাধ না।
এরপর রিংকু বলেন, ‘এখানে অনেক নির্মাতা আছেন, যাদের সাথে আমি আন্দোলনে ছিলাম। শাহবাগ, টিএসসি, শহীদ মিনারে ছিলাম। আমার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী থেকেও লোকজন আন্দোলনে আসে। তাদের দুইজনকে আমার বাসায় আশ্রয় দিয়েছি। রাজপথে থেকে আন্দোলন করেছি। ১৮ জুলাই আবু সাঈদকে নিয়েও পোস্ট দিয়েছি।’
এরপর বিচারক বলেন, ‘যেহেতু আসামি এজাহারনামীয় নয়। তদন্ত কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে কি পেয়েছেন তা কেস ডকেটে (সিডি) আছে। সিডিসহ তদন্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে শুনানি হওয়া পর্যন্ত। আজকে জামিনের আবেদন নথিভুক্ত করে রাখলাম। বৃহস্পতিবার তদন্তকারী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে জামিন শুনানি হবে। এখন আসামি কারাগারে যাবে।’
শুনানিকালে নাট্যনির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী, দীপংকর দীপন, অভিনেতা আরশ খানসহ রিংকুর আরও সহকর্মীরা আদালতে হাজির হন। তারাও রিংকুর জামিন চান।
এর আগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে রিংকুকে গ্রেপ্তার করে গুলশান থানা পুলিশ। তিনি একসময় ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই গুলশানের শাহজাদপুরে সুবাস্তুর নজর ভ্যালির সামনে গুলিতে নাইমুর রহমান নিহত হন। এ ঘটনায় তার বাবা খলিলুর রহমান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানাসহ ৬৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়, সাবেক চিফ হুইপ নূরে আলম চৌধুরী লিটন, সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, ব্যবসায়ী দিলীপ কুমার আগরওয়ালা।