শেষমেশ রাশিয়ার বেঁধে দেয়া সীমা অতিক্রম করলো যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ার ভেতরে হামলার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিত্রদের কাছে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র চেয়ে আসছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির যেলেন্সকি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বরাবরই এর বিরোধিতা করলেও অবশেষে ক্ষমতা ছাড়ার দুই মাস আগে কিয়েভকে নিজেদের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছেন। ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে ওয়াশিংটনের বড় আকারের অবস্থান বদল এটি।
চলমান যুদ্ধকে নতুন অধ্যায়ে নিতে এবং অব্যাহত রুশ হামলায় কোণঠাসা ইউক্রেনকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই এই সিদ্ধান্ত বাইডেনের। শীতের আগে আগে রাশিয়া যেভাবে একের পর এক ইউক্রেনের ভূখণ্ড দখলে নিচ্ছিলো এই পদক্ষেপ তাতে বাগড়া দেবে। শুধু তাই নয়, রাশিয়ার কার্স্ক প্রদেশে অনুপ্রবেশ করা ইউক্রেনীয় সেনারা দূরপাল্লার মার্কিন মিসাইল ব্যবহার করে দেশটির আরো গভীর যাওয়ার সুযোগ পাবে।
সূত্র বলছে, ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপণযোগ্য যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম-এটিএসিএমএস ব্যবহার করার অনুমতি দেয়া হয়েছে ইউক্রেনকে। ১৭০ কেজি বিস্ফোরকের ওয়ারহেড নিয়ে এটি ৩০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতেও আঘাত হানতে সক্ষম। এগুলো দিয়ে সহজেই রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোসহ বিভিন্ন স্থাপনায় আঘাত হানতে সক্ষম হবে কিয়েভ।
এদিকে আগে থেকেই এমন সিদ্ধান্ত না নেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোকে সতর্ক করে আসছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। অন্যথায় ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো সরাসরি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে বলে ধরে নেবে ক্রেমলিন। সে ক্ষেত্রে সরাসরি যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন তিনি। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এবারে সেটিই বাস্তব হতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা আক্রান্ত হলে পুতিন অবশ্যই মার্কিন স্বার্থে জোরালো আঘাত হেনে শোধ তুলবেন। তাতে করে হামলা-পাল্টা হামলায় পরিস্থিতি চলে যেতে পারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
এরই মাঝে বাইডেন প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি করবে বলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রুশ পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স কমিটি। তারা বলছে, এর মধ্য দিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে অনেক ধাপ এগিয়ে যাবে বিশ্ব। ক্রেমলিন বলছে, ইউক্রেনকে দূরপাল্লার মিসাইল সরবরাহ হবে যুদ্ধের লেলিহান আগুনে নতুন করে ঘি ঢেলে দেয়া। রুশ রাজনীতিক ও সাংবাদিক মারিয়া বুতিনা বলেন, বাইডেন নতুন করে যুদ্ধের উত্তেজনা ছড়াতে কাজ করছেন। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কারো স্বার্থই রক্ষা করতে পারবে না, এর ফলে সব পক্ষই সীমাহীন মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এদিকে রাশিয়ায় হামলা চালানোর জন্য এরই মাঝে দূরপাল্লার মার্কিন মিসাইল প্রস্তুত করা হয়েছে বলে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যেলেন্সকি। সোমবার জাতির উদ্দেশ্যে এক ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে আগামীতে মুখ নয়, কথা বলবে মিসাইল। তার এমন হুমকিতে যুদ্ধের আসন্ন ভয়াবহতা নিয়ে নতুন করে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে।
সব মিলিয়ে আগামী দিনগুলোতে ইউক্রেন যুদ্ধের মোড় কোন দিকে ঘুরবে তা বলা যাচ্ছে না। সব পক্ষই ক্রমশ আরো কঠোর অবস্থান বেছে নিচ্ছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে মার্কিন মিসাইল ইউক্রেনকে যুদ্ধজয়ের দিকে এগিয়ে দেবে নাকি পাশার দান উল্টে চলে যাবে রাশিয়ার দিকে? নাকি সত্যি সত্যিই এর জেরে বিশ্ব ক্রমশ এগিয়ে যাবে আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের পথে, এসব প্রশ্নের উত্তর জানার সময় এখনও আসেনি।