বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি মো. নুরুল হক নুরকে (ভিপি নুর) পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) এলাকায় সহযোগিতা করতে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ২২ অক্টোবর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এমন একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। এই চিঠি নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। নুরের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চর বিশ্বাস ইউনিয়নে। পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসন থেকে তার নির্বাচন করার গুঞ্জন চলছে দীর্ঘদিন ধরে।
নুরকে সহযোগিতার জন্য কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেওয়ায় ক্ষুব্ধ তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীরা। বুধবার দশমিনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে গণঅধিকার পরিষদের জনসভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখেন ভিপি নুর।
গলাচিপায় নুরসহ নেতাকর্মীরা বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের লোকজনের হামলার শিকার হওয়ায় এবার যেন এমন পরিস্থিতি না হয়, সেজন্য কেন্দ্র থেকে বিএনপি চিঠি পাঠিয়েছে বলে মন করছেন বিএনপির কেউ কেউ। তবে দশমিনা উপজেলা বিএনপির তৃণমূলের অধিকাংশ নেতাকর্মী এসব যুক্তি মানতে নারাজ। তারা দলের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে ফেসবুকে নানা পোস্ট দিচ্ছেন। দলের সিদ্ধান্তকে ভুল বলে তৃণমূলের নেতারা দলকে এমন সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসার অনুরোধ জানান।
দশমিনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সালাউদ্দিন সৈকত যুগান্তরকে বলেন, তাদের বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেণির টেস্ট পরীক্ষা চলমান রয়েছে। পরীক্ষার সময় নির্ধারিত ছিল দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৪টা; কিন্তু ভিপি নুরের জনসভা থাকায় তা পরিবর্তন করে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন : কর্মীকে থাপ্পড় মারলেন মির্জা ফখরুল
দশমিনা উপজেলা বিএনপির সাবেক ১ম যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হাওলাদার মো. ইফতিয়াস উদ্দিন জয় বলেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভিপি নুরকে সহযোগিতার জন্য যে চিঠি দিয়েছেন তা তৃণমূলের জন্য ভুল সিদ্ধান্ত। কারণ জোটবদ্ধ আন্দোলন মানে এই নয় যে চালচুলোবিহীন নেতা ও দলকে বিএনপি জোটবদ্ধ করে প্রতিষ্ঠিত করবে। যার যার যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে। এই মুহূর্তে এসব নেতারা যদি এলাকায় গিয়ে সমাবেশ করে তাহলে ১০-২০ জন লোকও পাবে না।
কেন্দ্রীয় বিএনপির পক্ষ থেকে ভিপি নুরুল হক নুরকে দলের স্থানীয় পদে প্রার্থী করার পক্ষে সাফ জানানো হলেও, স্থানীয় নেতাদের মধ্যে তার বিরুদ্ধে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এই বিষয়ে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে উত্তপ্ত আলোচনা ও বিতর্ক চলছে।
সূত্র জানায়, স্থানীয় বিএনপির কিছু শীর্ষ নেতা নুরকে দলের জন্য উপযুক্ত প্রার্থী হিসেবে মনে করছেন না। তাদের মতে, নুরের রাজনৈতিক অবস্থান এবং পূর্বের কর্মকাণ্ডে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। তারা মনে করেন, নুরের নেতৃত্ব স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে।
এদিকে, কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতারা নুরকে তরুণ নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরতে চাচ্ছেন। তারা মনে করছেন, নুরের জনপ্রিয়তা যুব সমাজের মধ্যে অনেক বেশি এবং তার প্রার্থীতা দলের জন্য লাভজনক হবে।
স্থানীয় বিএনপির বিরোধিতার মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে এ নিয়ে চাপা চাপা উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, বিএনপির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত কিভাবে স্থানীয় নেতাদের মতামতের সাথে মিলে যায় এবং নুরের প্রার্থীতা কীভাবে প্রভাবিত হয়।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব দলটির ভবিষ্যৎ কার্যক্রমে কি প্রভাব ফেলবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।