শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া-মণ্ডলিয়াপাড়া ইউনিয়নের উত্তর ফুলপুর গ্রামের বিধবা রেণু বেগম (৫০)। সকাল থেকে মুখে কিছু দেয়নি। নদীর দিকে তাকিয়ে শুধু কাঁদছে। ১০ বছর আগে স্বামী নুরল ইসলামকে হারিয়ে দুই সন্তান নিয়ে বাবার এই ভিটায় ফিরে এসেছিল। এখানে সন্তান দুটোও মারা যায়। জীবনের বহু স্মৃতি জড়িয়ে আছে এ বাড়িতে। বাড়ির আশপাশের লোকজন তাদের ঘরগুলো দ্রুত সরিয়ে নিয়েছে। বাড়ির সামনেই দুরন্ত পাহাড়ি নদী ভোগাই। ভারি বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে ভোগাই নদী ভেঙেছে।
গত শুক্রবার চোখের পলকেই রেণু বেগমের ভিটেমাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বৃদ্ধা মা আর মৃত মেয়ের ঘরে রেখে যাওয়া দুই নাতিকে নিয়ে সে কোথায় যাবে জানে না। উত্তর ফুলপুর গ্রামের ১৩ পরিবার নদীভাঙনের কারণে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছে। গাছপালা ভেসে গেছে ভোগাই নদীর তীব্র স্রোতে। এ পরিবারগুলোর কেউ নিজ ভিটার অবশিষ্টাংশে আবার কেউ অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
রেণু বেগম জানান, ভোগাই নদীর হিংস্র ছোবল থেকে বাড়ির ভিটা বাঁচাতে দুবার ঘর সরিয়েছেন। ছিল বাঁশের ঝাড়। কিছু বাঁশ বিক্রি আর শাকসবজি চাষ ও ছাগল-মুরগি পালন করে দুই নাতি আর বৃদ্ধা মাকে নিয়ে কোনোমতে তার দিন কেটে যেত। কিন্তু এখন শেষ সম্বল বাড়ির ভিটে হারিয়ে সে চোখেমুখে অন্ধকার দেখছে।
গ্রামের রুহল আমিন ও রিপন মিয়া জানান, তাদের মোট নব্বই শতক জমি ছিল। আড়াই শতক জমি বাদে সবটুকুই এখন নদীগর্ভে। তাদের মতে, ভোগাই নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর পানির ধাক্কা লাগছে উত্তর ফুলপুর গ্রামে। ফলে তিন বছরের মাথায় তারা বাড়ির ভিটে হারিয়ে নিঃস্ব হতে চলেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভোগাই নদীর এই ভাঙনে শুধু এই পরিবারগুলো নিঃস্ব হচ্ছে তা নয়। এই ভাঙনের ফলে পুরো এলাকার আবাদ ফসল হুমকির মধ্যে পড়েছে। তারা দ্রুত এই ভাঙন রোধের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী জালাল উদ্দিন জানান, ভোগাই নদী ভাঙনের শিকার এই পরিবারগুলো সত্যিকার অর্থেই অসহায়। দিন মজুরি করে, রিকশা চালিয়ে কোনোমতে তাদের দিন চলে। এভাবে তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও হারালে কষ্টের কোনো শেষ থাকবে না। তিনি তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁইসহ সিসি ব্লক দিয়ে ভাঙন বন্ধের দাবি জানান।
চলতি মৌসুমের পাহাড়ি ঢলে বাঘবেড় ইউনিয়নের চেল্লাখালী নদীর দক্ষিণ সন্ন্যাসি ভিটা এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ৩০০ মিটার বাঁধ ভাঙে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে নদীতীরবর্তী বেশ কিছু পরিবার। এ ছাড়া ভোগাই নদীর খাল ভাঙা ও নালিতাবাড়ী পৌরসভার উত্তর গড়কান্দা ও নিজপাড়া এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে।