নাটক-সিনেমার ট্র্যাজেডিকেও হার মানিয়েছে এই ঘটনা। দীর্ঘ প্রেমের পরিণতিতে মোবাইলে সৌদি প্রবাসী রুবেল হোসেনকে বিয়ে করেছিলেন কলেজছাত্রী মরিয়ম খাতুন৷ বিয়ের পর ভিডিও কল ছাড়া সরাসরি দেখা হয়নি তাদের৷ হয়নি ফুল সজ্জাও। এর মধ্যেই সর্বনাশা আগুনে পুড়ল স্বামীকে। অগ্নি শিখায় পুড়ল প্রিয় মানুষটিকে কাছে পাওয়ার স্বপ্ন। আর স্বামীর মৃত্যুর খবরে থামছেই না মরিয়মের আহাজারি।
গত শুক্রবার সৌদি আরবে সোফা কারখানায় আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ৯ জনের একজন রাজশাহীর বাগমারার মাধাইমুড়ি গ্রামের রুবেল হোসেন। দীর্ঘ ছয় বছর ধরে দেশের বাইরে তিনি৷ আর গত ৯ মাস আগে মোবাইলে ভিডিও কনফারেন্সে বিয়ে হয়েছিলো রুবেল-মরিয়মের। স্বামীর মৃত্যুর খবরে মোবাইলে ছবি দেখে আহাজারি করছেন মরিয়ম খাতুন।
আহাজারি করতে করতে মরিয়ম বলেন, কেনো তুই শুক্রবারের নামাজ পড়লি না রে রুবেল। নামাজ পরলে তোকে আর মরতে হতো না।
মরিয়ম বলেন, সে ( রুবেল) আমাকে অনেক ভালবাসতো। কাজের ফাঁকে যখনই সময় পেতো আমার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলতো। আমি রাগারাগি করতাম, বারবার ওকে দেশে আসতে বলতাম। ও আমাকে সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাতো। বলতো একটু ধৈর্য ধর। দূরে থেকে শুধুই সান্ত্বনা দিত।
তিনি আরো বলেন, আমার স্বামীকে একটা বার হলেও দেখতে চাই। স্বামীকে আমি কাছ থেকে দেখিনি রে। আপনাদের পায়ে ধরি আমার স্বামীকে এনে দেন রে ভাই। স্বামীকে কোনো দিন কাছ থেকে দেখিনি।
মরিয়ম জানান, সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে তাদের শেষ কথা হয়। দেশে আসার জন্য শুক্রবার কাগজপত্র জমা দিয়ে কারখানায় যাবেন বলে স্ত্রীকে জানিয়েছিল রুবেল। শুক্রবার রাতে আবার কথা বলবে বলেছিল। রাতে কলও দিয়েছিল মরিয়ম। কিন্তু ফোন বাজে কেউ রিসিভ করেনি। রাত ৯টা পর্যন্ত ফোন বেজেছে। এরপর ফোন আর বাজেনি। শনিবার সকাল ৮টার দিকে রুবেলের প্রবাসী বড় ভাই ফোন করে জানান রুবেল মারা গেছে। এখন লাশের অপেক্ষার প্রহর গুনছে পরিবার।
জানা যায়, তিন ভাইয়ের মধ্যে রুবেল সবার ছোট। প্রায় ৭ বছরের আগে সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় সৌদিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন রুবেল। তার বড় দুই ভাই আগে থেকেই প্রবাসী। বড় ভাই সৌদি আরব এবং মেজে ভাই দুবাই থাকেন।