প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বন্যা কবলে দিল্লি। গত ৪৫ বছরের মধ্যে নদীতে পানির উচ্চতা সবচেয়ে বেশি। প্রতিবেশী প্রদেশ হরিয়ানা থেকেও বন্যার ঢল আসছে শহরে। এসন অবস্থায় শহর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন অনেক মানুষ। পানিতে ডুবে গেছে রাস্তাঘাটসহ অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা। এখন পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আর এই পরিস্থিতির জন্য নগর পরিকল্পনায় বড় এক ভুলই দায়ী বলে দাবি করেছেন দেশটির এক বিশেষজ্ঞ।
ভারতের স্বাধীনতার পর দিল্লি শহরের জন্য করা পরিকল্পনায় বড় এক ত্রুটি থেকে গিয়েছিল বলে দাবি করছেন দেশটির এক বিশেষজ্ঞ। ১৯৬০ এর দশকে করা সেই পরিকল্পনার ভুল দিন দিন আরও বড় আকার ধারণ করেছে এবং সে কারণেই আজ শহরটির বিভিন্ন অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত বলে জানিয়েছেন নগর বিশেষজ্ঞ একে জেইন। এনডিটিভিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাতকারে দিল্লি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (ডিডিএ) এর সাবেক কমিশনার একে জেইন বলেন, `স্বাধীনতার প্রথম ১৯৬২ সালে প্রথম দিল্লি শহরের জন্য বড় আকারে নগর পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু সেসময় বন্যায় জর্জরিত যমুনা অঞ্চলকে `খালি জায়গা‘ দেখিয়ে বড় এক `ভুল‘ করেন নগর পরিকল্পনাকারীরা।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, শহরের বর্তমান নিষ্কাশন ব্যবস্থা ১৯৭০ এর দশকের আদলে করা হয়েছিল যখন দিল্লির জনসংখ্যা ছিল ৩০ থেকে ৩৫ লাখ। এখন এই সংখ্যা ২ কোটিরও বেশি।
একে জেইন বলেন, গত এক হাজার বছরে ভাঙা গড়ার মধ্য দিয়ে গেছে দিল্লি। কিন্তু ভৌগলিকভাবে বরবারই এই শহর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এর একপাশে নদী ও আরেকপাশে পাহাড়ের অংশ। দিল্লিকে এর মধ্যেই বেড়ে উঠতে হয়েছে।
ব্রিটিশ স্থপতি এডওয়ার্ড লুইটেন্স যমুনার তীরে বন্যার এই ঝুঁকির ব্যাপারে আগেই সতর্ক করেছিলেন। ব্রিটিশরা যখন দিল্লিকে রাজধানী বানানোর সিদ্ধান্ত নেয় তখনই তিনি এই ঝুঁকির কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু বন্যা ও ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও কাজ চালিয়ে যাওয়া হয় কারণ রাজা পঞ্চম জর্জ ততদিনে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে ফেলেন। পরবর্তী বছরগুলোতে এই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অনেকগুলো অবকাঠামো নির্মাণ করা হয় যার মধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রিং রোড, ইন্ধিরা গান্ধী ইনডোর স্টেডিয়ামও ছিল।
এজন্যই রিং রোডে এই সময় বন্যা হয়েছে উল্লেখ করে জেইন বলেন, এই অঞ্চলকে ‘জোন ও’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়। ১০০ স্কয়ার কিলোমিটার জুড়ে এই অঞ্চলে কোনও নির্মাণকাজ না করারও সুপারিশ করা হয়। কিন্তু প্রায় ১০০ অননুমোদিত কলোনি এখানে গড়ে উঠে। আর দিল্লি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়।
জেইনের দাবি, সাম্প্রতিক উন্নয়ন কার্যক্রমে এই শহরের সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। নতুন পরিকল্পনায় বলা হচ্ছে, যমুনা অঞ্চল হবে ৬৩ বর্গকিলোমিটার। আর বাকি যেই অঞ্চলে অবৈধ বসতি গড়ে উঠেছে সেগুলোকে নিয়মিত অঞ্চলের আওতায় আনা হবে। এই অঞ্চলে নদীর আয়তন কমে যাবে ৪০ শতাংশ। এতে করে বন্যার ঝুঁকি আরও বেড়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি। তিনি ব্যাখ্যা করেন, দিল্লির পুরো পানি নিষ্কানশন ব্যবস্থা এখন পাল্টে যাবে। শহর থেকে পানি আর কমতে পারছে না কারণ নদীতে পানির উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে।