নিজ সংগঠনের দুই নেতার মারধরে কানের পর্দা ফেটে যাওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা মো. নজরুল ইসলাম নিরাপত্তাহীনতার কারণ দেখিয়ে গতকাল শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। অবশেষে এ বিষয়টি নিয়েই মুখ খুলেছেন শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ ড. হাবিবুর রহমান রাসেল।
সার্বিক বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ বলেন, ‘সে চলে গেছে কি আছে, আমাকে কিছুই জানায়নি। সে ন্যায়বিচার না পাওয়া ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে চলে গেছে দাবি করলে, আমি বলব সে সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা কথা বলছে। নিরাপত্তাহীনতা থাকলে তার তো উচিত ছিল প্রাধ্যক্ষকে জানানো।’
ড. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘গতকাল ও পরশু আমার সঙ্গে যখন তার কথা হয়েছে, তখন কিন্তু সে বলেনি তার কানে সমস্যা হচ্ছে। তার কানের সমস্যার কারণেই ছয়-সাত মাস আগে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনতলার পরিবর্তে নীচতলায় রুমের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। সে আমাকে বলেছিল, স্যার আমি পলিটিক্যাল রুমে থাকি, কিন্তু আমার মথাব্যাথা হয়, কানে সমস্যা আছে। আমাকে একটা নিরিবিলি রুমে দেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে আমি তার রুমে আধাঘণ্টা ছিলাম, তখনো সে আমাকে বলেনি যে সে নিরাপত্তাহীনতা ভুগছে। সেখানে সাংবাদিকসহ ১০-১৫ জন ছেলে ছিল। সে আমার কাছে কোনো অভিযোগ করে নাই। সে প্রক্টর বরাবর অভিযোগ জানিয়েছে। সেটার একটা অনুলিপি গতকাল আমাকে দিয়েছে। আমি বুধবার তার সঙ্গে কথা বলেছিলাম। সে বলেছিল, স্যার, মিটমাট হয়ে গেছে।’
‘তারপর রাতে মোবাইল করে খোঁজখবর নিয়ে পরের দিন (বৃহস্পতিবার) দেখা করতে বলেছিলাম। সে দেখা না করেই প্রক্টরের কাছে চলে গেছে! সে আমাকে কিছু জানাচ্ছে না। তার বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছ থেকে আমি শুনছি! সাংবাদিকদের কাছে সে যেসব কথা বলছে, সেগুলো আমাকে কেন বলল না? এর পেছনে আসলে কি উদ্দেশ্য আছে, কারা আছে বা কি আছে আমি জানি না’, যোগ করেন প্রাধ্যক্ষ।
এদিকে শুক্রবার ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে হলের প্রাধ্যক্ষকে জানিয়েছিলেন কি না জানতে চাইলে অভিযোগকারী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে স্যার আমাকে বলেছিলেন, খোঁজখবর রাখবেন। আমি শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলাম, উনি খোঁজ নেননি। আর আমি তো অসুস্থ। আমি তো ওখানে থাকতে পারি না। যেকোনো সময় যেকোনো ঘটনা ঘটতেই পারে। আমিতো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে ছিলাম।’
বৃহস্পতিবার রাতে প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় কেন নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি বলেননি জানতে চাইলে এই ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘উনি আমার রুমে গিয়েছিলেন, ঠিক আছে। কিন্তু উনি তো আমার কথা শোনেননি। উনি জাস্ট সান্ত্বনা দিয়ে চলে গিয়েছিলেন।’
এর আগে নজরুল ইসলাম অভিযোগ করেছিলেন, গত মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হলের গেস্টরুমে মারধর করে কানের পর্দা ফাটিয়ে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলতাফ সায়েম জেমস এবং সৈয়দ আমীর আলী হল শাখা ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক উপ-সম্পাদক আল-আমিন।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন ওই ছাত্র। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্তরা দাবি করেন, তৃতীয় পক্ষের প্ররোচনায় তাদের ফাঁসানোর জন্য এসব অভিযোগ করছেন নজরুল।
মো. নজরুল ইসলাম রাবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং হল শাখা ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক।